সিলেট, ৯ জানুয়ারী : বৃহস্পতিবার বিপিএলের ম্যাচে ঢাকাকে অনায়াসে ৭ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগং কিংস। ১৭৮ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ৩ বল হাতে রেখে। ব্যাটারদের সম্মিলিত অবদানে জয়ের হাসি মিলেছে তাদের।
চিটাগংয়ের হয়ে পাকিস্তানের উসমান খান ৩৩ বলে সাতটি চার ও তিনটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন। তার পাশাপাশি শেষদিকে ঝড় তোলেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি। তিনি চারটি চার ও একটি ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৩৩ রান। ব্যাটাররা ছড়ি ঘোরালেও ম্যাচসেরার পুরস্কার গেছে খালেদ আহমেদের ঝুলিতে। চিটাগংয়ের ডানহাতি পেসার ৪ ওভারে ২১ রান খরচায় পান ৩ উইকেট।
এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে হারা ঢাকা রয়েছে পয়েন্ট তালিকার ছয় নম্বরে। তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয় পাওয়া চিটাগং নেট রান রেটের ব্যবধানে অবস্থান করছে তিনে।
ঢাকার প্রথম তিনটি ম্যাচে সাব্বিরের জায়গা হয়নি একাদশে। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণেই মূলত তিনি ছিলেন মাঠের বাইরে। গত মঙ্গলবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে একাদশে ঢুকলেও আউট হয়ে যান ৭ বলে মাত্র ২ রান করে। তবুও তার ওপর আস্থা ধরে রাখে ঢাকা। সেটার প্রতিদান দিয়ে ছক্কার বৃষ্টি ঝরালেও দলটিকে জয়ের দিশা দিতে পারেননি তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সেরা সময়ের সাব্বিরকেই দেখা গেছে অনেক দিন বাদে। চতুর্থ উইকেটে জুটিতে তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ৩৫ বলে ৬৩ রান আনেন তিনি। সেখানে তানজিদের অবদান কেবল ১৩ বলে ১১ রান। এই জুটি ভাঙার আগেই ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন সাব্বির। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে আফগানিস্তানের ফরমানউল্লাহ শাফিকে নিয়ে ১৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
চার পরিবর্তন নিয়ে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা ৫ উইকেটে পৌঁছায় ১৭৭ রান পর্যন্ত। সাব্বির ছাড়া রান পান কেবল ওপেনার তানজিদ। তিনি ৪৮ বলে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় ৫৪ রান করে খালেদের শিকার হন।
রংপুরের বিপক্ষে ঢাকার সবশেষ ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নামটি ছিল লিটন দাস। আগের চার ম্যাচে ৮৭.৫০ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৪২ রান করেন তিনি। এছাড়া, হাবিবুর রহমান সোহান, আলাউদ্দিন বাবু ও আফগানিস্তানের আমির হামজার সুযোগ মেলেনি।
ব্যাটাররা লড়াইয়ের পুঁজি দিলেও ঢাকার বোলিং আক্রমণ দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেনি। পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ৩৭ ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে চিটাগংকে লক্ষ্য তাড়ার শক্ত ভিত দেন উসমান। এরপর ইংল্যান্ডের গ্রাহাম ক্লার্ককে নিয়ে ৩০ বলে ৫১ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়েন তিনি। দ্বাদশ ওভারে উসমানের বিদায় নিলেও মিঠুন ও শামিমের কল্যাণে জয়ের বন্দরে নোঙর করতে বেগ পেতে হয়নি চিটাগংকে।
দিনের অপর ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে দল ও নিজেকে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে দিয়েছেন সোহান। বিপিএলের ইতিহাসে শেষ ওভারে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এটাই।
ফরচুন বরিশালের কাইল মেয়ার্সের শেষ ডেলিভারিটি সীমানা ছাড়া করে ছুটলেন নুরুল হাসান সোহান। দলকে জেতানোর আনন্দ উদযাপনে ব্যাটটা যেভাবে ঘোরাচ্ছিলেন তিনি, আপনার কাছে তরবারি মনে হতে পারে। আদতেই ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করেছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের যখন দরকার ২৬ রান, সোহান হয়ে উঠলেন বরিশালের জন্য 'যমদূত'। ছক্কায় শুরু, ছক্কায় শেষ; মাঝে থাকলো চার-ছক্কার ফুলঝুরি। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে রংপুরকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বিশাল লক্ষ্যে ধীর-স্থির শুরুর পর জয় যখন দূরের পথ হয়ে উঠছিল, তখন কাণ্ডারী হয়ে দেখা দেন দুই পাকিস্তানি ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহ। এ দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ব্যবধান কমে আসে, জাগে রংপুরের জয়ের সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনার পথও ছিল খুব কঠিন। কিন্তু সোহান বীরত্বে সেটাও সম্ভব হলো, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্বার পথচলায় আরেকটি জয় যোগ হলো রংপুরের ঝুলিতে। রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে দল ও নিজেকে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে দিয়েছেন সোহান। বিপিএলের ইতিহাসে শেষ ওভারে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এটাই।
বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। বিপিএলে এটা তাদের ষষ্ঠ জয়, শিরোপা প্রত্যাশী দলটিকে এখনও কেউ হারের স্বাদ দিতে পারেনি। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষ দল রংপুর। চলতি আসরে ফিরতি ম্যাচে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বড় রান তুলেও হৃদয় ভাঙা হার মেনে নিতে হলো তামিম ইকবালের দল বরিশালকে। আগের দেখায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে বরিশাল। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে তারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan